শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: রাজধানীসহ সারা দেশে মহামারি আকার নিয়েছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর। ক্রমশ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে নগরজুড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)।
শুধু ফগার মেশিনে মশার ওষুধ ছিটিয়ে নয়, এবার করপোরেশন নজর দিয়েছে সব রকমের মশার প্রজননক্ষেত্র বিনষ্ট করতে। এজন্য তারা দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের গবেষকদের।
সম্প্রতি নালা-নর্দমায় মশার ডিম ও লার্ভা নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখানো ‘মশাভুক মাছ’ (মসকিউটো ফিশ) নিয়ে অভিযানে নেমেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। নগরীর নালা-নর্দমায় ছাড়া হচ্ছে মশাখেকো এ মাছ।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিকেলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু নগরীর বিদ্যাময়ী স্কুলের পেছনের বড় নালায় ও স্কুলটির পুকুরে প্রায় ৭ হাজার ‘মশাভুক মাছ’ অবমুক্ত করেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে নগরীর প্রায় ৩শ কিলোমিটার নালা ও ১২টি নর্দমায় প্রায় লক্ষাধিক মাছ অবমুক্ত করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল গবেষক আরেকটি বিশেষ প্রজাতির মাছ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে দেবে বলে জানিয়েছেন মেয়র ইকরামুল।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এ বি মো. শামসুজ্জামান সেলিম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে হাসপাতালে ১৬১ জন ডেঙ্গু রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, ডেঙ্গুমুক্ত ময়মনসিংহ মহানগরী গড়তে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়ে মাঠে তৎপর রয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। এজন্য পুরোদমে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। একই সঙ্গে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটাচ্ছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, মশার ওষুধ ছিটিয়ে কেবল এডিস মশা নির্মূল সম্ভব নয়। এজন্য সচেতনতার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে করপোরেশন। ইতোমধ্যে নিজেই প্রায় ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে ডেঙ্গু সতর্কবার্তা সম্বলিত প্রচারপত্র তুলে দিয়েছেন মেয়র।
দিন কয়েক আগে ঢাকা থেকে আসা সব যানবাহনে এডিস মশা তাড়াতে বাসের চালকদের হাতে প্রায় তিন শতাধিক অ্যারোসল তুলে দিয়েছেন সিটি মেয়র।
পাশাপাশি ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠন মেয়রের আহ্বানে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। তারা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেনতা সৃষ্টি করে নাগরিকদের সচেতন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ‘মশাভুক মাছ’ নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ। ২০১৭ সালে প্রথম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ড্রেনে মশা নিয়ন্ত্রণে মসকিউটো ফিসের সফলতার পর এর দক্ষতা নিয়ে গবেষণা করেন।
নর্দমার পানিতে মশার লার্ভা নিধনে মশাভুক মাছ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণে প্রথমে তাদের কাছ থেকে ৭ হাজার মাছ নেওয়া হয়েছে।
প্রথম দিনেই এ মাছগুলো নালা-নর্দমায় অবমুক্তের পাশাপাশি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরো লক্ষাধিক মাছ নগরীর প্রতিটি নালা-নর্দমায় অবমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, বছরজুড়েই মসকিউটো ফিশের মাধ্যমে নগরীর প্রতিটি নালা-নর্দমায় মশা নিধন কর্মসূচি চলবে। স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য আরেক প্রজাতির বিশেষ মাছ আনা হচ্ছে।
পাশাপাশি ডেঙ্গু নির্মূলে নিজেদের উদ্যোগে নিজের বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করারও আহ্বান জানান তিনি।